চাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

চাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন শুরু হয়েছে। ৩৫ বছর পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল নয়টায় শান্তিপূর্ণ পরিবশে ভোট শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।১৯৯০ সালের পর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের এই দিনটিকে ঘিরে চবি ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পুরো ক্যাম্পাসকে ঢাকা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ), বিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনসহ (নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) মোট পাঁচটি ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ ও একটি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন হবে। এবং প্রতিটি ভবনে ১২টি করে মোট ৬০টি ভোটকক্ষ রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচটি অনুষদের প্রতিটিতে একজন করে মোট পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রগুলোর বাইরে আরও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে মোবাইল কোর্ট। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন মোট ১,১২২ জন পুলিশ সদস্য। রিজার্ভ ফোর্স থাকবে ২০০ জন, মহিলা পুলিশ ১৮ জন, রেলওয়ে পুলিশ আনুমানিক ১০০ জন এবং র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্য থাকবেন প্রায় ১০০ জন। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিএসবি ও ডিবির শতাধিক সদস্য।নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বহিরাগত প্রবেশে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।’

কোন পদে কত প্রার্থী

চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদে সর্বমোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। সহ-সভাপতি পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দফতর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-দফতর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৬ জন।

এছাড়া যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ২০ জন এবং নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কোন কেন্দ্রে কত ভোট

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে প্রকৌশল অনুষদে (আইটি) সোহরাওয়ার্দী হল কেন্দ্রে ভোট দেবেন মোট ৪ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী। শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ভোট দেবেন ৫ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহজালাল হল কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৬৬ জন, এ এফ রহমান হল কেন্দ্রে ১ হাজার ৩০৭ জন এবং আলাওল হল কেন্দ্রে ১ হাজার ২৯০ জন ভোটার রয়েছেন।

বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৫৩৮ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাহ আমানত হল কেন্দ্রে ২ হাজার ২৪৭ জন, শহীদ আবদুর রব হল কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৭৫ জন এবং মাস্টারদা সূর্য সেন হল কেন্দ্রে ৫১৬ জন।

এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেবেন ৬ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা হল কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭৯ জন, শামসু্ন্নাহার হল কেন্দ্রে ২ হাজার ২৯১ জন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৮৭ জন এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল কেন্দ্রে ৬৪৯ জন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন মোট ৭ হাজার ৭৩ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে প্রীতিলতা হল কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয় ২৪ হল কেন্দ্রে ২ হাজার ৬০৪ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৬০ জন এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল কেন্দ্রে ১৫৪ জন।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৬০টি কক্ষের প্রতিটিতে গড়ে ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিটি অনুষদ ভবনের ডিনকে রিটার্নিং অফিসার এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসে এসে ভোট দিতে পারে তার জন্য বাড়ানো হয়েছে শাটলের ২টি ট্রিপ ও দেওয়া হয়েছে ১৫টি বাস।

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর শুরু হওয়া এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নের প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা।

( এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। )

Comments are closed.




© All rights reserved © 2024 websitenews24.com